বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০৬ অপরাহ্ন

আয়নাঘরে থাকার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা জানালেন আহমাদ বিন কাশেম

আয়নাঘরে থাকার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা জানালেন আহমাদ বিন কাশেম

স্বদেশ ডেস্ক:

চোঁখবাধা, হাতে তখনও হাতকড়া, আট বছরের মধ্যে প্রথম এই অবস্থায় বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন তিনি অপেক্ষা করছেন কখন গুলির আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে তার খুলি। আলোচিত ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পাওয়ার মুহূর্তগুলো এভাবেই বর্ণনা করেছেন ব্যারিস্টার আহমাদ বিন কাশেম। লুক্সেমবার্গভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরটিএলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বর্ণনা করেছেন সেদিনের ঘটনা।

তিনি বলেন, চোখ বাধা অবস্থায় শ্বাস আটকে তিনি বন্দুক রিলোডের শব্দের অপেক্ষা করছিলেন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে তাকে হত্যা করা হবে। কারণ তিনি তখনো জানেন না গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা।

চোখ বাধা অবস্থায়তেই ঢাকার কাছে তাকে এক কর্দমাক্ত এলাকায় ফেলে যান আটককারীরা। ৪০ বছর বয়সী আহমাদ বলেন, `তখনই আট বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আমি মুক্ত বাতাস নিতে পারি। আমার ধারণা ছিল হত্যা করার জন্যই আমাকে বের করা হচ্ছে।‘

সেনা গোয়েন্দাদের তত্ত্বাবধানে থাকা আয়নাঘরে বন্দি ছিলেন আহমাদ। দীর্ঘ ৮ আট বছর তিনি সেখানে একটি কক্ষে আটক ছিলেন।

তিনি বলেছেন, তিনি আয়নাঘর থেকে বাহিরের আযান শুনতে পেতেন। সেখানে উচ্চ আওয়াজে মিউজিক বাজানো হতো। মূলত আজান শুনে শুনে দিন রাতের পার্থক্য করতেন আহমদ। তবে সেখানে তিনি ঠিক কত দিন অতিবাহিত করেছেন সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা তার ছিলনা। মিউজিক বন্ধ হলেই তিনি অন্য বন্দীদের চিৎকার শুনতে পেতেন। আহমদ বলেছেন, ধীরে ধীরে আমি বুঝতে পারি সেখানে আমি একা নই। আমি সেখানে প্রতিনিয়ত অন্য বন্দীদের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতাম। সম্ভবত সেখানে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বন্দীরা চিৎকার করত।‘

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে ৬০০ জন গুমের শিকার হয়েছেন। ২০২২ সালে প্রথম এক রিপোর্টে আয়নাঘরের তথ্য সামনে আসে। তবে হাসিন সরকার বরাবরই বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিল।

আহমাদ বলেন, তিনি তার আটক হওয়ার কারণ জানতেন। বাবা জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী। যে বছর মীর কাসেম আলীকে ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর করে সেবছরই তাকে গুম করা হয়েছিল।

সেসময় আহমাদের বয়স ছিল ৩২ বছর। বাবাকে বাঁচাতে তিনি লন্ডন বারে আহ্বান জানান। বিচারব্যবস্থা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলেন ও এর প্রক্রিয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে থাকেন। জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ও মানবাদিকার সংস্থাগুলোও তাকে সমর্থন দেন। আর এতেই সরকারের রোষে পড়ে যান আহমাদ।

একদিন রাতে সাদাপোশাকে কয়েকজন ব্যক্তি তাকে পরিবারের সামনে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সিঁড়ি দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে তাকে একটি গাড়িতে তোলে। আহমাদ বলেন, আমি কখনোই ভাবতে পারিনি আমার বাবা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কয়েকদিন আগে আমাকে গুম করা হবে। আমি বারবার তাদের বলতে থাকি, তোমরা কি জানো না আমি কে? আমাকে এই কেসটা লড়তে হবে। আমার পরিবারের সঙ্গে থাকতে হবে।‘

এর চার সপ্তাহ পর ফাঁসি হয় মীর কাশেম আলির। তবে আহমাদ সেটা জানতে পারেন আরও তিন বছর পর। একজন কারারক্ষী মুখ ফসকে কথাটি বলে ফেলে।

যেদিন রাতে আহমাদকে ফেলে রাখা হয়, তিনি সাররাত হেঁটে হেঁটে নিজের বাড়ি খুঁজতে থাকেন। কাকতালীয়ভাবে তিনি এমন একটি অলাভজনক মেডিকেল ক্লিনিকের সামনে আসেন যার ট্রাস্টি ছিলেন তার বাবাই। তাকে ক্লিনিকের একজন কর্মী চিনতে পেরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়।

আহমাদ বলেন, ‘পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে কয়েকজন তরুণের জন্য। আমি যখন তাদের দিকে তাকাই, নেতৃত্ব দিতে দেখি তখন আমার বুকে আশা জন্মে যে বাংলাদেশ হয়তো নতুন পথ খুঁজে পেয়েছে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877